চট্টগ্রামের শতাব্দী প্রাচীন সর্বজনীন এক লোক উৎসবের নাম বলী খেলা। এই খেলায় জেতার প্রধান মন্ত্র হলো শক্তি, সাহস ও কৌশল। বাংলা নববর্ষ ও বলী খেলা যেন একই সূত্রে গাঁথা। একসময় চরাঞ্চলসহ মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পথে প্রান্তরে নববর্ষ উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলার বড় বড় আয়োজন হতো। কালের গর্ভে আজ সেসব যেন স্মৃতি। দীর্ঘসময় পর এবার ঐতিহ্যের বলী খেলার আয়োজন করা হয়।
উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন ইছাখালীর চরাঞ্চলে টেকেরহাটবাসীর উদ্যোগে সোমবার বিকেলে পুরাতন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জমিতে এই বলী খেলার আয়োজন হয়। খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে। ছোট, মাঝারি ও বড়দের বলী খেলায় ২ শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেন। চট্টগ্রামের মিরসরাই, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাউজান, বোয়ালখালী, পটিয়া, ফেনী, সোনাগাজী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা, ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রামের আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় অংশ নেওয়া অসংখ্য বলী এতে অংশ নেন। ফাইনালে ভোলার সজিব বলীকে হারিয়ে ইছাখালী ইউনিয়নের আমিন বাজার এলাকার কামরুল বলী চ্যাম্পিয়ন হন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় তাকে ফ্রিজ উপহার দেওয়া হয়। খেলায় অংশগ্রহণকারীদের পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া হয় ফ্রিজ, টিভি, বাইসাইকেল, মোবাইল, টেবিল, সিলিং ফ্যান, গ্যাসের চুলা, খাঁচা ফ্যান, কলস, ছাতা, হটপট, পানির মগ, চাউলের বস্তা ও সাবান।
বলী খেলায় অংশ নেওয়া সানাউল করিম স্বপন বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে বলী খেলায় অংশ নিয়ে আসছি। মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ছাগলনাইয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত শতাধিক বলী খেলায় অংশ নিয়েছি। অনেক বছর পর আজ আবার খেলায় অংশ নিয়ে বাই সাইকেল জিতলাম।’আনোয়ারা উপজেলা থেকে বলী খেলায় অংশ নিতে আসেন রাজন বলী। তিনি বলেন, ‘লালদীঘিতে জব্বারের বলী খেলায়ও অংশ নিয়েছি। এবার ইছাখালীর টেকেরহাট এলাকায় আমিসহ চার জন এসেছি। কয়েকটিতে জয়ী হয়েছি। শেষবার স্বপন বলীর কাছে হেরে যাই।’
বলী খেলা আয়োজকদের অন্যতম আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মীর হোসেন রাহাত জানান, এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় বলী খেলার আয়োজন ছিল এটি। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই খেলার আয়োজনে আমরা সম্পৃক্ত হতে পেরে ধন্য মনে করছি। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।তারা আরো জানান, খেলা দেখতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে। ২ শতাধিক বলী এতে অংশ নেন।বলী খেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, ‘ইছাখালীতে ঐতিহ্যগতভাবে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। বিগত কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আবারো শত বছরের গ্রামীণ জনপদের জনপ্রিয় এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন